রক্ত সঞ্চালন বাড়ছে অর্থনীতিতে
নিয়াজ মাহমুদ: বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে রক্ত সঞ্চালনের মতো কাজ করে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতায় এই রক্ত সঞ্চালন ব্যাপক ব্যাহত হয়েছে। সম্প্রতি ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আস্থা ফিরে পাচ্ছেন দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা। ফলে বিনিয়োগ ও ব্যাংকে টাকার চাহিদা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে আশানুরূপ বিনিয়োগ না হওয়ায় দেশের ব্যাংকিং খাতে অলস অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। দিন দিন ব্যাংকবিমুখ হয়েছিলেন নতুন-পুরোনো উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, দুই বছর আগে ব্যাংকঋণ পাওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ছুটতেন। এমনকি ঋণের জন্য যথারীতি লবিংও করতেন। এর পরে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের পেছনে ঘুরছে ব্যাংকগুলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা আবারও ব্যাংকমুখী হচ্ছেন। ব্যাংকগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে টাকার চাহিদা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবকাঠামোগত সমস্যা, আস্থাহীনতা ও উচ্চ সুদের কারণে প্রায় দুই বছর কেউ ঋণ নিতে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু নির্বাচনের পরে বিনিয়োগের পরিবেশ কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হচ্ছে।বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যমতে, চলতি বছরের (২০১৪-১৫) প্রথম প্রান্তিকে বৈদেশিক, স্থানীয় ও যৌথ ফার্মসমূহের বিনিয়োগ রেজিস্ট্রেশন প্রবণতা বেড়েছে ২৫ ভাগ।
বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে আরো জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩৪৫টি বিনিয়োগ প্রস্তাবের মাধ্যমে ২০০ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় ৩১৮টি প্রস্তাবের মাধ্যমে ১৮৩ বিলিয়ন টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব রেজিস্ট্রেশন হয়। আর বাকি ২৭টি বৈদেশিক ও যৌথ প্রস্তাবের মাধ্যমে ১৭ বিলিয়ন টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব রেজিস্ট্রেশন করে বিনিয়োগ বোর্ড। আগের অর্থবছরে এই সময়ে বিনিয়োগ রেজিস্ট্রেশনের পরিমাণ ছিল ১৬০ বিলিয়ন টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিনিয়োগ মন্দা কাটাতে বেশির ভাগ ব্যাংক আমানতে সুদের হার ৮ থেকে ৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে। কিছুদিন আগেও যা ১২ শতাংশের ওপরে ছিল। ফলে বিনিয়োগ চাহিদা বাড়ায় কলমানি ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের বড় অঙ্কের ধার নিতে হচ্ছে। ব্যাংকাররা বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত থাকায় ব্যবসার পরিধি বাড়াতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগেও আগ্রহ বাড়ছে। আস্থা পুরোপুরি ফিরে পেলে বিনিয়োগের গতি আরো বাড়বে।
বিনিয়োগ বাড়ার তথ্য নিশ্চিত করে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘বড় ধরনের প্রকল্পে পর্যাপ্ত সাড়া পাওয়া না গেলেও স্থানীয় বিনিয়োগ নিবন্ধনে এরই মধ্যে বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।’ বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কথা হয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদের সঙ্গে। ‘গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা ভাবমূর্তির যে সংকট তৈরি করেছিল, তা কাটতে শুরু করেছে। দেশে বর্তমানে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগে মন্দা থাকার পর এখন কিছুটা চাঙ্গা। আমদানি প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি। তবে এই বিনিয়োগ উৎপাদনশীল খাতে প্রবাহিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ।’