বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » বিশেষ সংবাদ » রহস্য উন্মোচিত হতে শুরু করেছে রাবি শিক্ষক হত্যা

রহস্য উন্মোচিত হতে শুরু করেছে রাবি শিক্ষক হত্যা 

রাবি প্রতিনিধিঃ  বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলনের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হতে শুরু করেছে।
শনিবার বিকেলে ওই শিক্ষকের তালাবদ্ধ বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া এক ছাত্রীকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে এমনটিই দাবি সংশ্লিষ্টদের।
ওই ছাত্রী একই বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। তার শিক্ষাবর্ষ ২০০৮-০৯। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় প্রধানপাড়া গ্রামে। তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী তিনি। তিনি ওই শিক্ষকের অধীনে গবেষণা করছিলেন। তবে বিষয়টি নিয়ে লুকোচুরি করছে পুলিশ। নিছকই পারিবারিক বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে তারা

। shafiul
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রী শফিউল ইসলামের বাসায় তার সঙ্গে দেখা করতে যান। এসময় ওই বাসায় শিক্ষক ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। এরপর শনিবার সকালে ওই ছাত্রীকে রেখেই বাসায় তালা দিয়ে শফিউল ইসলাম বিভাগে যান।
বিভাগের প্রয়োজনীয় কাজ শেষে দুপুর আড়াই টার দিকে মোটরসাইকেল যোগে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিহাস এলাকায় নিজ বাসার প্রায় ১০০ গজ দূর পৌঁছালেই দু’জন অস্ত্রধারী যুবক তার গতিরোধ করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে তার মৃত্যু হয়।
অভিযুক্ত ছাত্রীর গ্রামের প্রতিবেশী, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও পুলিশ জানান, নিহত শফিউল ওই ছাত্রীকে তার নিজ বাসায় তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। ওই ছাত্রী নিজেকে উদ্ধারের জন্য তার মায়ের কাছে ফোন দেন। এরপর ওই ছাত্রীর মা বিষয়টি তার সহপাঠীদের জানিয়ে উদ্ধারের অনুরোধ জানান। ওই ছাত্রী তার ঘনিষ্ঠজনদের ফোন করে তাকে আটকে রাখার বিষয়টি জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর ওই ছাত্রীর মা, বাবা ও তার মামা তাকে উদ্ধারের জন্য গোবিন্দগঞ্জ থেকে শনিবার দুপুরের দিকে ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন। পরিবারের সদস্যরা স্যারের বাসা থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করার বিভিন্নভাবে চেষ্টা শুরু করেন।
এরপর বেলা ৩টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফেরার পথে শিক্ষক শফিউল সন্ত্রাসীদের নৃসংশ হামলার শিকার হন।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই ডিবি পুলিশের সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। কিছুক্ষণ পর তারা ওই বাড়িতে তালা ভেঙে তল্লাশি চালায়। এসময় বাড়ির একটি কক্ষ থেকে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তার উদ্ধারের বিষয়টি গোপন রেখেই শুরু করে জিজ্ঞাসাবাদ।
সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে ছাত্রীর মা জানান, তারা (ছাত্রীর বাবা, মামা, দুই বোন) মেয়েকে উদ্ধারের জন্য শনিবার রাজশাহীতে আসেন। পরে সন্ধ্যার দিকে ওই শিক্ষকের বাসার সামনে গেলে পুলিশ তাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ওই ছাত্রীর সঙ্গে নিহত ড. শফিউলের সঙ্গে গভীর সখ্যতা ছিলো। বিভিন্ন সময় ওই ছাত্রী স্যারের বাসায়ও যেতেন। এর আগে প্রেমিক জাহাঙ্গীরের হাত ধরেই স্যারের সঙ্গে পরিচয় হয় ওই ছাত্রীর। স্যারের আস্থাভাজন জাহাঙ্গীর একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। স্যারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর পর প্রেমিক জাহাঙ্গীরকে এড়িয়ে চলতে থাকেন ওই ছাত্রী। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীর ওই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে ধারণা করছে অনেকে।

অপর একটি সূত্র জানায়, মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের মোবাইল ফোনটি আঁকড়ে ধরে ছিলেন নিহত শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম শাফিউল ইসলাম। শরীর থেকে অধিক রক্তক্ষরণে যখন তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলেন তখনও বার বার চেয়েও মোবাইলটি হাতে নিতে পারেননি উপস্থিত শিক্ষকরা।

এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে রক্ত দেয়া হচ্ছিল তখনই হাত থেকে পড়ে যায় মোবাইলটি। এর খানিক পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ড. শফিউল। পরে ওই মোবাইল ফোনটি হেফাজতে নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুক। তিনি পরবর্তীতে তা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করেন।

প্রশ্ন উঠেছে কেন মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ড. শফিউল হাতছাড়া করতে চাননি মোবাইলটি? তবে কি বড় কোনো প্রমাণ লুকিয়ে আছে মোবাইলটিতে? হয়তো তিনি হামলাকারীদের ফোন রেকর্ড করেছিলেন। কিংবা ভিডিও বা এসএমএস (খুদেবার্তা) কিংবা কল নাম্বার সংরক্ষিত রেখেছেন। এমন নানা ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষকসহ হত্যার ক্লু অনুসন্ধানে নামা আইন-শৃঙ্খলাবাহীর সদস্যদের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, স্যারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি হতে পারে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের বড় ‘ক্লু’। হামলার পর থেকে জ্ঞান হারানোর আগ পর্যন্ত স্যার তার মোবাইল ফোনটি হাতছাড়া করেননি। তিনি মনে করেন, পুলিশ যখন কোনো ক্লু উদ্ধারে ব্যর্থ তখন ওই মোবাইল ফোনটিই হতে পারে বড় ক্লু।
এদিকে, নিহত এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন নিকটস্থ আত্বীয়-স্বজন। তালাক দেয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় তাকে বিভিন্ন ভাবে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গ্রামের বাড়িতে জানাজায় অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষর্থীদের কাছে নিহত শফিউলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা এ অভিযোগ করেন। তারা বলেন, গত ঈদ-উল আজহার সময় স্যার বাড়িতে এসে বলেছিলেন, ‘আমার জীবন হুমকির মুখে’। তালাক দেয়ার পর দ্বিতীয় স্ত্রীর পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ বলেন, এখনো হত্যাকাণ্ডের কোন ক্লু উদ্ধার হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, লালন ও মাজার ভক্ত হওয়ায় তিনি উগ্র মৌলবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠী দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। উদ্ধারকৃত আলামত থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরই অংশ হিসেবে কথিত জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ এর স্বীকারোক্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশপাশি জামায়াত-শিবিরেরও সংশ্লিষ্টতা খোঁজা হচ্ছে। তবে এ হত্যাকাণ্ডে জামায়াত-শিবির সরাসরি জড়িত কি’না তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আটক নেতাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদের পর্যায়ে রাখা হয়েছে।
এছাড়া পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহ-বিরোধ এবং বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তদন্তে সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। ওই শিক্ষকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকেও তারা ক্লু উদ্ধারের চেষ্টা করছেন বলে জানান ওসি। এ ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ওই ছাত্রীর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
তবে ওই শিক্ষকের বাসা থেকে ছাত্রী উদ্ধারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নগরীর মতিহার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, বিষয়টি নিছক ব্যক্তিগত। আর তাই এটি এখন তদন্তে আসছেনা। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই ছাত্রীকে নগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। তার স্বজনরা আসলেই তাকে তাদের নিকট হন্তান্তর করা হবে বলে জানান ওসি।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone