সমালোচনার ঝড় এইচটি ইমাম বিস্ফোরক মন্তব্য নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সম্প্রতি সব মহলেই এইচটি ইমামকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এবার নতুন এক প্রসঙ্গে সমালোচনার পাত্র হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক উপদেষ্টা। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে বা অন্য যেকোনো অনুষ্ঠানে ঘুমিয়ে থেকে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীরা। এ তালিকায় আছেন সমাজকল্যান মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মহিউদ্দিন খান আলমগীর। এবার প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ঘুমের খবর প্রকাশিত হয়েছে। অন্য কোনো সভা সমিতিতে নয়, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠানে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তার প্রভাবশালী উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালীন সময়ে মূল মঞ্চের পাশেই চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি
ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কার জন্য, কীসের জন্য এবং কেন মধ্যবর্তী নির্বাচন দেব? জিয়াউর রহমানের দল বিএনপিকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য কি মধ্যবর্তী নির্বাচন দেব। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন তো হয়েই গেছে। নির্বাচনে অংশ নেয়া, ভোট দেয়া সকলের গণতান্ত্রিক অধিকার। যারা নির্বাচনে আসেনি, তারা গণতন্ত্রকে অসম্মান করেছে। তাদের জন্য আমি কী করতে পারি?’
এদিকে নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরে দেড়মাসের মাথায় ঢাকায় ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে এইচ টি ইমাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে।’
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিসিএসের চাকরি নিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমাদের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হবে। তারপর আমরা দেখব।’
এইচ টি ইমামের কথায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শুক্রবার ঢাকায় সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এইচ টি ইমাম ওই দিন সম্পূর্ণ অকারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বক্তব্য দিয়েছেন।’ তিনি দল ও সরকারের ক্ষতি হয় এমন বক্তব্য না দিতে সতর্ক করে দেন। সরকারের মন্ত্রী এবং বোর্ডের সদস্যরা দলীয় এবং সরকারি পদ থেকে এইচ টি ইমামকে অপসারণ করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন।
উপস্থিত নেতারা সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে দেয়া আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তিনিও সরকার এবং দলকে বিপদে ফেলেছিলেন। তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। সরকার ও দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এইচ টি ইমামও একইভাবে দল ও সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যে সরগরম হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহল। বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের রেস্তোরাঁ গুলোতে সকাল-সন্ধ্যা চলছে তার সেই বেফাঁস কথার নানা মন্তব্য ও সমালোচনা। শুধু বিএনপির নয়, খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই কড়া সমালোচনা করছে এইচ টি ইমামের অহেতুক মন্তব্যের।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে দেশে বিদেশে সমালোচনা রয়েছে ব্যাপক। বিএনপি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে আরেকটি নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। আর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী বন্ধু দেশগুলোও সংলাপ এবং সবদলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচনের কথা বলছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সাবেক আমলা এইচ টি ইমাম প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। নীতি নির্ধারণে তিনি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। ৫ জানুযারির নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান সরকার শপথ নেয়ার পর তিনি মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হন। এইচ টি ইমাম বঙ্গবন্ধুর আমলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ছিলেন। তবে তিনি ১৫ আগস্টের পর খোন্দকার মোশতাকের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানও পরিচালনা করেন।