জাতীয় বিদ্যুত খাতে একনেকে সভায় ৮৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প
মোরশেদ ইকবালঃ গত ১ নভেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল সারাদেশ। জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে বিপর্যয়ের ফলে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৯টি ইউনিটও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওইদিন দেশব্যাপী নেমে আসে বিশাল মানবিক বিপর্যয়।
এতে নড়েচড়ে বসে সরকার। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার দিকে নজর দিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আশুগঞ্জ থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দুর্ঘটনা এড়াতে সঞ্চালন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে ৮৫৩ কোটি টাকা চেয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
আশুগঞ্জ-ভুলতা ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণে ৮৫৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে
প্রকল্প প্রস্তাবটি মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠেয় একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য ওঠানো হবে। একনেক সভার তালিকাভূক্ত ৮টি প্রকল্পের মধ্যে এক নাম্বারে রাখা হয়েছে এ সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাবটি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৬৭৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২১৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প এলাকা হল নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ, সোনারগাঁও এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম, আশুগঞ্জ-ভুলতা পর্যন্ত ৪০০ কেভি দ্বৈত সার্কিটে ৭০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন ও ভুলতা হরিপুর থেকে রামপুরা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ২৩০ কেভি দ্বৈত সার্কিটে লাইন ইন ও লাইন আউট নির্মাণ। এছাড়া ভুলতা ঘোড়াশাল-রামপুরা ২৩০ কেভি দ্বৈত সার্কিট লাইন-ইন ও লাইন আউট নির্মাণ করা হবে এক কিলোমিটার। নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় ৪০০/২৩০ কেভি ও ২/২৫০ এমভি এআইএস উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
৪৫০ মেগাওয়াটের আরও দুটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (আশুগঞ্জ দক্ষিণ ও আশুগঞ্জ উত্তর) নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। এ অবস্থায় আশুগঞ্জ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েট করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বর্তমান সঞ্চালন কাঠামো দ্বারা ইভাকুয়েট করা সম্ভব হবে না।
প্রকল্পের আওতায়, আশুগঞ্জ থেকে ভুলতা পর্যন্ত ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন এবং ভুলতায় ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়া কেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ভুলতা ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্র বিদ্যমান ঘোড়াশাল-রামপুরা ও হরিপুর-রামপুরা লাইনের ইন আউটের মাধ্যমে রামপুরা ২৩০/১৩২ কেভি উপকেন্দ্রেও বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে ঢাকা শহরে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।
এছাড়া ভুলতায় ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্র বিদ্যমান ঘোড়াশাল-রামপুরা ও হরিপুর-রামপুরা লাইনের ইন-আউটের মাধ্যমে রামপুরা ২৩০/১৩২ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এর মাধ্যমে বিশেষকরে ঢাকা শহরে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে বলে জানায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি। এই ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী পর্যায়ে গত ১ নভেম্বরের মতো ঘটনা যাতে দেশব্যাপী না ঘটে সে লক্ষ্য নিয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
Posted in: বিশেষ সংবাদ