আজ রাতে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠে নামছেন মেসি-রোনালদো
স্পোর্টস ডেস্কঃ ফুটবল বিশ্বের এ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বী তারকা লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বলা যায়, বিস্ময়করভাবে আপন যাদুতে বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছেন এ দুই ফুটবল যাদুকর।
যাদুকর বললেও কম হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি! বিশ্বজুড়েই চলছে তাদের নিয়ে উন্মাদনা। রোজই জন্ম হচ্ছে তাদের নিয়ে নতুন নতুন খবর।
মেসি কিংবা রোনালদোর পরিচিতি সীমানা ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। তাদের নাম শোনেননি এমন মানুষ দুনিয়ায় বিরল। এই দুই ফুটবল যাদুকর সরাসরি পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠে নামছেন আজ রাতে
।
রাত ১ টা ৪৫ মিনিটে প্রীতি ম্যাচের লড়াই হবে আর্জেন্টিনা-পর্তুগালের। এই দুটি দলেরই অধিনায়ক মেসি-রোনালদো। বোঝাই যাচ্ছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইটাও হবে জমজমাট। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তার প্রিয় মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসিকে। দুই যাদুকরের দ্বৈরথে ম্যাচটি হয়ে উঠবে চরম উত্তেজনাপূর্ণ। আর ফুটবলপ্রেমীরাও রয়েছেন এমনই এক ধুন্দুমার লড়াই উপভোগ করার অপেক্ষায়।
তবে এ সব উত্তেজনার কিছুই স্পর্শ করেনি পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোসকে। দল নিয়ে ইংল্যান্ডে পৌঁছানোর পর তিনি বলেন, ‘এটা সামান্য প্রীতি ম্যাচ। এর কোনো মূল্য নেই। এটা যদি বিশ্বকাপের ম্যাচ হতো তবেই না বিশেষ কিছু হতো।’
তাঁর কাছে কোনো মূল্য না থাকলেও রোনালদোর কাছে এটা বিশেষ কিছুই। সেটির কারণ, ‘ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফেরাটা সব সময়ই আনন্দের। আশা করি, পর্তুগাল ম্যাচটা জিতবে।’
এদিকে, রোনালদো আগেই বেশ কয়েকবার বলেছেন, ‘ওল্ড ট্র্যাফোর্ড আমার দ্বিতীয় ঘর।’ ম্যানইউ সমর্থকরাও তাকে আদর করে ডেকে থাকেন ‘ঘরের ছেলে’। ২০০৩ থেকে ২০০৯-এ ছয় বছর আলোকিত করে রেখেছিলেন ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্টেডিয়ামটিতে তখন নিজেকে অবিসংবাদিত সম্রাটের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন রোনালদো। পেশাদারিত্বের টানে সেই রোনালদো এখন রিয়াল মাদ্রিদের। কিন্তু ম্যানচেস্টার তাকে ভোলেনি।
গত রোববার শহরটির বিমানবন্দর থেকে জাতীয় দল সতীর্থদের সঙ্গে রোনালদো গাড়িতে উঠতেই তাকে জেঁকে ধরে হাজার খানেক ভক্ত। দেখে যে কেউই মনে করবে রোনালদো বুঝি এখনো ম্যানইউর ফুটবলার!
আসলে পর্তুগিজ যুবরাজকে নিয়ে ম্যানইউ ভক্তদের এমন উচ্ছ্বাসের কারণ আজ রাতের হাইভোল্টেজ ম্যাচ। জাতীয় দলের জার্সিতে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেসি-রোনালদোর দ্বৈরথ দেখার সুযোগ পাবেন ফুটবল ভক্তরা।
আজকের এই ম্যাচে ম্যানচেস্টারের সাপোর্ট থাকবে রোনালদোর। এতে সন্দেহ রাখার অবকাশ নেই। কারণ ইংলিশ ক্লাবটির ভক্তদের কাছে আজকের এই ম্যাচটি আবেগেরও। ২০০৯ ও ২০১১ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে এক মেসির কাছেই হেরে যায় ম্যানইউ।
গত ছয় বছর ধরে গ্রহের সেরা ফুটবলারের বিতর্কটা যে মেসি-রোনালদোতেই সীমাবদ্ধ, তা নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। এ সময়ের মাঝে ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কারটি তাদের দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। মেসি জিতেছেন চারবার, রোনালদো দুইবার।
শুধু তাই নয়, বার্সেলোনায় যোগ দেয়ার পর মেসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছেন তিনবার। এর পাশাপাশি ছয়বার জিতেছেন লা লিগা শিরোপা। ম্যানইউ এবং রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছেন রোনালদো।
এ ছাড়া রিয়াল ও ম্যানইউর হয়ে তিনবার করে লিগ জিতেছেন বর্তমানের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। জাতীয় দলের মোড়কে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের লড়াইটি তাই এক হিসেবে বর্তমান সময়ের দুই সেরা ফুটবলারের দ্বৈরথ। মেসির বিপক্ষে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে রোনালদো কিন্তু আগেভাগেই রেড ডেভিলস ভক্তদের সমর্থন চেয়ে রাখলেন, ‘ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ফেরা আমার কাছে সবসময়ই বিশেষ কিছু। আশা করছি গোটা স্টেডিয়াম দর্শকে পরিপূর্ণ থাকবে।’
আর সেই দ্বৈরথে কার জয় হবে সেটা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। সম্প্রতি ফর্মের কথা ভেবে অনেকেই এগিয়ে রাখছেন রোনালদোকে। ক্লাবের হয়ে সব রকম প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৭ বার মাঠে নেমে রোনালদো এখন পর্যন্ত করেছেন ২৩ গোল। আর মেসি সেখানে অনেকটাই পিছিয়ে আছেন। ক্লাবের জার্সি গায়ে ১৫ বার মাঠে নেমে করেছেন ১১ গোল।
দেশের হয়েও সর্বশেষ ম্যাচে গোল পেয়েছেন দুজনই। তবে ইতিহাস পক্ষে আছে আর্জেন্টিনার। ২৬ বার মুখোমুখি লড়াইয়ে ১২ জয় জেরার্ডো মার্টিনোর দলের। আর পর্তুগিজদের জয় ৭ ম্যাচে। বাকি ম্যাচগুলো ছিল ড্র।
শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি কে হাসবে সেটা বলা যাচ্ছে না তবুও। মেসি-রোনালদো দ্বৈরথের আড়ালে পড়ে যাওয়া আগুয়েরো, তেভেজ, ডি মারিয়ারাও যে আছেন আর্জেন্টিনায়। তাই আর্জেন্টিনাকেই ফেভারিট মানছেন ফুটবলবোদ্ধারা।