গোলাম রেজা ও বিদিশাকে নিয়ে জাপায় হঠাৎ তোলপাড়
ডেস্ক রিপোর্ট : সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলী থেকে বহিষ্কৃত জাপা নেতা গোলাম রেজা এবং এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশাকে নিয়ে হঠাৎ তোলপাড় শুরু হয়েছে জাতীয় পার্টিতে। গত দুই সপ্তাহ থেকে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে হাইকমান্ড পর্যন্ত নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে বিতর্কিত এই দুই ব্যক্তিকে নিয়ে। গোলাম রেজাকে দলে ফেরানোর জন্য এরশাদ গত ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট পার্কে তার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। বৈঠকে রেজাকে জাপা চেয়ারম্যান আগের মতো দলে ফিরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আহ্বান জানান। কিন্তু এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও এখনো রেজাকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না
অন্যদিকে একই দিন একই সময়ে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য প্রেসিডেন্ট পার্কে আসেন। প্রেসিডেন্ট পার্কের আশপাশের বাসিন্দারা জানান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ তার সাবেক স্ত্রী বিদিশার বাসায় প্রায় সময়ই আসেন। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা জানি বিদিশাকে এরশাদ অনেক আগেই ছেড়ে (তালাক) দিয়েছেন। কিন্তু এখন এ বাসায় কেন আসেন তা সবার কাছে প্রশ্ন।
জাপা সূত্র জানায়, একসময় এরশাদের সব কর্মের সহযোগী ছিলেন গোলাম রেজা। হঠাৎ এরশাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তার জন্য রেজাকে দায়ী করা হয়। আর বিতর্কিত বিষয়কে ঢাকতে রেজার মুখ বন্ধ রাখতে এরশাদ তাকে দলে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে ১৪ অক্টোবর বনানীর একটি রেস্টুরেন্টে মধ্যাহ্নভোজের সময় কয়েক সাংবাদিককে এরশাদ বলেছিলেন, এখন বুঝছি ভালো হোক আর খারাপ হোক মানুষের জীবনে স্ত্রী খুব অপরিহার্য। কারণ মা না থাকলে সন্তানদের লেখাপড়াও ঠিক মতো হয় না। বাবার পক্ষে সন্তানের লেখাপড়া বা স্কুলের খবরাখবর ঠিকমতো রাখা সম্ভব হয় না। পুত্র এরিকের লেখাপড়ার বিষয় বলতে গিয়ে নিজের এই উপলব্ধির কথা জানান তিনি।
এর আগে এরশাদ তার বনানীর দলীয় কার্যালয়ে কয়েক সাংবাদিককে জানান, এরিক সাত বছর ধরে একটি স্কুলে পড়লেও বাস্তবে লেখাপড়ায় তার তেমন কোনো উন্নতি নেই। আসলে প্রতিটি মানুষের স্ত্রী থাকা দরকার। তা না হলে আজকাল সন্তানদের লেখাপড়া করানো যায় না। পরের দিন এসব কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সেই থেকে নেতাকর্মীরা জানান, সম্ভবত এরশাদ বিদিশাকে পুনরায় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। এ কারণেই বিদিশা প্রেসিডেন্ট পার্কে নিয়মিত এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
অন্যদিকে দলের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু এরশাদ ও বিদিশার মধ্যে সম্পর্ক তৈরির কাজ করছেন। পুত্র এরিকের লেখাপড়ার অবহেলা দেখিয়ে বিদিশাকে পুনরায় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে যাচ্ছেন সাবেক এ সেনাশাসক।
অন্যদিকে রেজাকে দলে ইন না করাতে আর বিদিশা যেন এরশাদের কাছে আসতে না পারেন সে লক্ষ্যে দলের কয়েক শীর্ষ নেতা কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন। কারণ কী জানতে চাওয়া হলে প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য জানান, তাদের কারণে দলের ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
জাপা সূত্র আরো জানায়, ১৬ নভেম্বর “দলের কর্তৃত্ব দখলে এরশাদ ও রওশন পরস্পর বহিষ্কার আতঙ্কের: খবর প্রকাশিত হলে বিশেষভাবে নজরে নেন দলের চেয়ারম্যান এরশাদ। দলটির একাধিক নেতা এ কথা নিশ্চিত করেন। খবরের সূত্র ধরে বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে ১৮ নভেম্বর সভাপতিমণ্ডলীর পদ ফিরিয়ে দেন জাপা চেয়ারম্যান। এতে দলটির নেতারা মনে করেন, রাঙ্গাকে দলে ইন করার পর স্যার এরশাদ ও ম্যাডামের মধ্যে অনেকটা বিভাজন কমে যাবে। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের আশঙ্কার প্রশ্নই আসে না। পদ ফিরে পাওয়ায় রাঙ্গার সমর্থকরা রংপুরে এরশাদের বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেটের পোস্টারিং নামিয়ে ফেলেছেন।
অপরদিকে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে এরশাদের পালিত কন্যা অন্যন্যা হোসেন মৌসুমীকে নিয়ে। ১৩ নভেম্বর এরশাদ তাকে জাতীয় মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক করার পর দলের নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় তুলছেন। এসব ব্যাপারে জাপার নেতাদের মন্তব্য নেয়ার চেষ্টা করলে কেউ মুখ খুলতে চাননি।