ইরাকে নির্মম নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশিরা
রোকন উদ্দিনঃ সোনার হরিণ ধরতে বিদেশে পাড়ি দিয়ে ইরাকের বন্দিশালায় আটকা পড়েছেন অনেক বাংলাদেশি। নির্মম নির্যাতন সয়ে দিন কাটছে তাদের।ইরাকের নাজাব শহরে বন্দি রয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলার দেড় শতাধিক বাংলাদেশি। এদের মধ্যে মেহেরপুরের রয়েছেন ৪২ জন। এদের কাতার পাঠানোর কথা বলে ইরাকে পাঠিয়েছিল দালালরা। সেখানে পাচারকারী চক্রের হাতে এখন নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। সংসারের সুখ আর সচ্ছলতা আনার স্বপ্নে বিদেশে গমন করেছিলেন মেহেরপুরের ৪২ যুবক। কাতারে মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরির শর্তে তারা স্থানীয় দালালদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ৪ লাখ করে টাকা।
তবে প্রতারক দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের পাঠিয়েছে ইরাকের পাচার চক্রের কাছে। চাকরির পরিবর্তে ঠাঁই হয়েছে নাজাব শহরের একটি বন্দিশালায়। টেলিফোনে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। মেহেরপুর সদর উপজেলার টেংগার মাঠ, গাংনী উপজেলার কাজিপুর ও সাহেবনগরসহ কয়েকটি গ্রামে এখন কেবলই কান্নার রোল। সাত মাস আগে কাতার নেওয়ার কথা বলে তাদের ইরাকের নাজাব শহরে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানে ধু ধু মরুভূমিতে একটি ঘরে বন্দি অবস্থায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন হতভাগ্য বাংলাদেশিরা। মোবাইলে হাজার মাইল দূর থেকে পরিবার ও স্বজনদের কাছে ভেসে আসছে তাদের দুঃসহ জীবনযাপনের কাহিনি।নাজাব শহরের বন্দিশালা থেকে মোবাইলে গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের সুজন ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা শহরের আবদুল লতিফ জানান, সেখানে মেহেরপুর জেলাসহ বিভিন্ন জেলার অন্তত দেড় শতাধিক যুবককে আটকে রাখা হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে পাসপোর্ট-ভিসা। এদের মধ্যে কয়েকজন গোপনে মোবাইলে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাদের কষ্টের কথা জানিয়েছেন। দেশে ফিরতে চাইলে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন এবং হত্যার হুমকি অব্যাহত রয়েছে।গপনে তারা ইরাকে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগও করেন। দূতাবাস তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর আশ্বাস দিলেও তা কার্যকর হয়নি। তাই আটকে পড়া লোকজনকে দেশে ফেরাতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যরা।
তারা জানান, ইরাকের স্থানীয় কয়েকজন দালাল তাদের আটকে রেখেছেন। দিনে মাত্র একটি রুটি দেওয়া হয়। কয়েক দিন ধরে তারা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
আর্থিক সচ্ছলতার জন্য ভিটেমাটি বিক্রি এবং ঋণ নিয়ে সাত মাস আগে বিদেশে গেছেন তারা। এ জন্য তারা মাথাপিছু দালালদের ৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। ঢাকার গুলশান-২-এ অবস্থিত ক্যারিয়ার ওভারসিজ কনসালট্যান্ট লিমিটেডের মাধ্যমে তাদের কাতারে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাতারে না নিয়ে ইরাকের নাজাব শহরের আবু তোরাব হাউজিং কোম্পানিতে কাজের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাননি ভুক্তভোগীরা।
অন্যদিকে ঋণ ও ভিটেমাটি বিক্রি করায় অসহায় হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। ইরাকে অবস্থানরত স্বজনদের মতো তাদেরও দিন কাটছে অর্ধাহারে। আবার স্বজনের বিপদের অশনিসংকেত তাদের ব্যাকুল করে তুলেছে। চরম দৈন্য দশা বিরাজ করছে তাদের পরিবারে।
গাংনী উপজেলার সাবেনগর গ্রামের আদম ব্যবসায়ী মাহিরুল ইসলাম। তিনি ইরাকে বন্দিদের চারজনকে পাঠিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। এদের মধ্যে একজন কাজিপুরের সুজন। তবে প্রবাসীদের নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘তাদেরকে অন্য কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
দিকে আটকে পড়া লোকজনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কাছে দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগসহ আবেদন করেছে ভুক্তভোগী ১৬টি পরিবার।
আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার করে জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন জানান, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা