উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাননি তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিগ্রস্তরা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্তরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাননি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে প্রকৃত দোষীকে আজো বিচারের আওতায় আনা হয়নি। নিহতদের স্বজন ও আহত শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বিধি অনুযায়ী উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। একইসঙ্গে আহত শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা, অগ্নিকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিহতদের কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার তাজরীনের ঘটনার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, আহত শ্রমিক ও নিহতদের স্বজনরা এ দাবি করেন
।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল নিশ্চিন্তপুর, জুরাইন কবরস্থান ও রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন গতকাল মঙ্গলবার নানা কর্মসূচি পালন করে। গ্রার্মেন্টস শ্রমিকদের বিভিন্ন সংস্থা ও স্বজনরা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জুরাইন কবরস্থানে কবরে ফুল দেন। এসময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রসঙ্গত সরকারি হিসাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১২ জন নিহত হন। আর আহত হন দুই শতাধিক। নিহদের মধ্যে ৫৩ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে ডিএনএ নমুনা রেখে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে তাদের ৫১ জনের লাশ শনাক্ত করা গেছে।
জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহারানে সুলতান বলেন, এ পর্যন্ত গার্মেন্টস কারখানায় অন্তত ১০০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অথচ একটি ঘটনায়ও প্রকৃত অপরাধীর বিচার হয় নি। তিনি তাজরীনের ঘটনায় আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান।
তাজরীনে নিহত ১০৯ জনের স্বজনকে ৭ লাখ করে টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহতদের ১ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। তবে আহতরা বলছেন, তাদের পক্ষে কোন কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে তারা চরম দুর্দশায় আছেন।
এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশেও ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেনেরও উপযুক্ত শাস্তি দাবি করা হয়।
আমাদের সাভার প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে নিহতদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন গার্মেন্টসের প্রধান ফটকের সামনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এসময় শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন, তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখনো সব হতাহতের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত সকল শ্রমিককে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ ও মালিক দেলোয়ার হোসেনের কঠোর শাস্তির দাবি জানান শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
শ্রমিক নেতারা বলেন, প্রাণ বাঁচাতে কয়েকশ শ্রমিক উঁচ ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন মাটিতে। তাদের অনেকেই এখন পঙ্গু, কাজ করতে পারছেন না। এই মানুষের দায়ভার কে নেবে? ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে কথা হয় তাজরীন পোশাক কারখানার শ্রমিক মাহিনুর ও আল আমিনের সঙ্গে। জানান, ২০১০ সালে যোগদান করেন তাজরীন ফ্যাশনে। ওই দিন কারখানাটির চার তলায় কাজ করতেন তিনি।
আগুনের লেলিহান শিখা দেখেই লাফিয়ে রক্ষা পান। একাধিকবার কয়েকজন নাম-ঠিকানা লিখে নিলেও ক্ষতিপূরণ কিছুই মেলেনি। শুধু কারখানার তিন মাসের বেতন ছাড়া আর কিছুই পায়নি মাহিনুর ও আল-আমিন।