যে মিথ্যাগুলো আমরা সত্য বলেই জানি!
লাইফস্টাইল ডেস্ক : শিরোনামটি পড়ে অবাক হচ্ছে? অবাক হওয়াটাই হয়তো স্বাভাবিক। তবে পুরো লেখাটা পড়ার পর বুঝতে পারবেন যে আসলে ছেলেবেলা থেকে আমরা কিছু ভুল শিক্ষা পেয়ে বড় হয়েছি যা বর্তমানের আধুনিক সমাজে একদম অচল। এই মিথ্যাগুলোকে সত্য জেনেই আমরা বড় হই, অনেকে মন থেকে বিশ্বাসও করে বসি। আর নিজের অজান্তেই এই ভুল ব্যাপারগুলো আমাদেরকে সরিয়ে নিয়ে যায় বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে, কখনো কখনো হয়ে দাঁড়ায় কষ্ট ও দুর্দশার কারণ।
আসুন, জেনে নিই সেগুলোর ব্যাপারে।
১) টাকাই সবকিছু নয়
ছোটবেলায় শুধু কেন, এখনো নিশ্চয়ই প্রায়ই এই কথাটি শোনেন? ঝোঁকের মাথায় আর আবেগের বসে এমন একটা কথা বলে ফেললেও আসলে আপনি-আমি সকলেই জানি যে টাকা ছাড়া জীবন অচল। আর বর্তমানের আধুনিক পৃথিবীতে শুধুই তাঁরাই সম্মানিত, যাদের অর্থ আছে। খুব বেশি আহামরি না হোক, পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ অবশ্যই থাকা চাই জীবনে। টাকা না থাকলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়- এই কথাটিই বরং বেশি সত্য বাস্তব জীবনে।
২) কাউকে ভালবাসলে তাঁকে মুক্ত করে দাও, যদি সে ফিরে আসে তাহলে সে তোমার
যেসব মিথ্যাকে সত্য জেনে আমরা বড় হই, সেগুলোর মাঝে সবচাইতে বড় মিথ্যা সম্ভবত এটি। মন ভাঙা মানুষের সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়ার একটা মিথ্যা আশ্বাসও বলা যেতে পারে। কেউ যদি আপনাকে ছেড়ে চলে যায় এবং তারপর আপনার কাছে ফিরে আসে, এর অর্থ তিনি আপনার চাইতে ভালো কাউকে খুঁজে পাননি। আর যিনি একবার চলে গিয়েছেন, ভালো কাউকে পেলে তিনি আবারও চলে যাবেন। তাই ব্যাপারটার মাঝে অযথা রোমান্টিক কিছু খুঁজতে না যাওয়াই ভালো।
৩) সব খারাপের একটা ভালো দিক থাকে
এটাও একটা আশাবাদী মিথ্যা। সব খারাপের ভালো দিক থাকে না। পৃথিবীতে এমন অনেক খারাপ ঘটনা আছে, যেগুলোর মাঝে খুঁজলেও কোন ভালো ঘটনা পাওয়া যাবে না। বরং সব খারাপের মাঝে ভালো কিছু খুঁজতে গেলে আপনি ক্রমশ অলস আর অকর্মণ্য হয়ে উঠবেন। এর চাইতে সঠিক পরিস্থিতি বুঝতে শিখুন, সেটাকে মেনে নিন এবং খারাপ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে থাকুন।
৪) চেহারাটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, কাজটাই আসল
হ্যাঁ, কাজটা অবশ্যই আসল। কিন্তু তাই বলে আপনার চেহারা বা লুক জরুরী কিছু নয়, এটা মোটেও ভাবতে যাবেন না। চেহারা যদি গুরুত্বপূর্ণই না হবে, তাহলে চেহারার প্রয়োজনটা কী? জীবনে সবকিছুর প্রয়োজন আছে, একটি সুন্দর ও মার্জিত লুকেরও গুরুত্ব আছে বৈকি। আপনি দেখতে যেমনই হোন না কেন, যদি সর্বদা পরিপাটি ও মার্জিত থাকেন, দেখবেন জীবনটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। চট করে বন্ধু তৈরি হবে, কর্মক্ষেত্রে সকলের প্রশংসা পাবেন, সকলের চোখেই আপনার জন্য একটা আলাদা সম্মান তৈরি হবে। অন্যদিকে নোংরা আর আগছালো থাকলে, কিংবা হাসির খোরাক হতে পারেন এমন পোশাক পরিচ্ছদ পরলে ঘটনা ঘটবে একেবারেই উল্টো।
৫) ক্ষমা মহৎ গুণ
হ্যাঁ, ক্ষমা মহৎ গুণ নিঃসন্দেহে। কিন্তু তাই বলে পৃথিবীতে সকল অপরাধ মোটেও ক্ষমা করে দেয়া উচিত নয়। ছেলেবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয় ক্ষমা করতে। কিন্তু সত্য এটাই যে কেউ যখন আপনার সাথে প্রতারণা বা এমন ধরণের কোন অপরাধ করবে, তাহলে তাকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে অনুতপ্ত হয় এবং সঠিক প্রায়শ্চিত্ত করে। যদি নিজে থেকে ক্ষমা করে দেন, তাহলে একই অন্যায়ের শিকার আপনি আবারও হবেন। জীবনের সব ক্ষেত্রে এতটা মহৎ হবার প্রয়োজন নেই।
৬) যা হবার, তা হবেই
আসলেই কি তাই? এই কথাটি বিশ্বাস করে বসে থাকলে জীবনে আসলে কিছুই হবে না আপনার। ভালো কোন কিছু জীবনে হেঁটে হেঁটে আপনার কাছে আসবে না। সেটার জন্য চাই চেষ্টা ও পরিশ্রম। যেটা হবার, সেটার জন্য চেষ্টা না করলে সেটা তো হবেই না। উল্টো আপনার জীবন কাটবে অপেক্ষা করতে করতে।
৭) লোকে কী মনে করে সেটা জরুরী নয়
একটি সমাজে সকলের সঙ্গে বাস করতে গেলে অন্য মানুষেরা কী মনে করে সেটা নিঃসন্দেহে জরুরী। হ্যাঁ, কখনো কখনো সকলের মতের বাইরে গিয়ে নিজের কাজটা করে ফেলা জরুরী বটে। কিন্তু সেটা মোটেও সবসময় নয়। আমরা চাই বা না চাই, অন্য মানুষ কী ভাবছে সেটাকে আমাদের গুরুত্ব দিতেই হয়। তা সে পরিবার হোক, কর্মক্ষেত্রে হোক কিংবা সমাজের অন্য বিভাগে; অন্যের ভাবনা আসলেই আমাদের জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে।
৮) সবকিছুর পেছনে একটা কারণ থাকে
না, সবকিছুর পেছনে একটা জোরালো কারণ অনেক সময়েই থাকে না। আমাদের জীবনে অনেক দুর্ঘটনাই ঘটে যায় কোন কারণ ছাড়া, তাই সেগুলোর পেছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে অযথা নিজের সময় নষ্ট করবেন না। এসব নিয়ে যত ভাববেন, তত মন অশান্ত হবে। যেটা হয়ে গেছে, তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই জীবনে আগে বাড়ুন।
সূত্র-
এলিট ডেইলিতে প্রকাশিত 9 Flat-Out Lies We Are Told To Be True Our Entire Lives হতে। প্রবন্ধটি লিখেছেন Zack Arenson