নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত একটি সংবাদ সম্মেলন করেননি। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন করার প্রথা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরে একই বিমানে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া রীতি ছিল। সেই রীতি তিনি শুরুতেই ভেঙে দেন। ১০ বছর ধরে সংবাদমাধ্যম তার সফরসঙ্গী নয়। সংসদের উভয় কক্ষে সপ্তাহে এক দিন সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তার কাজ। ১০ বছরে এক দিনের জন্যও সেই কাজ তিনি করেননি।
অবশেষে ১০ বছর পর জানা গেল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন সংবাদ সম্মেলন করেন না। সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী সেই কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। যার মূল কথা, এখনকার গণমাধ্যম নিরপেক্ষ নয়।
ভারতের দুইবারের প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই জানিয়ে দেন, তিনি শুধু সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। এর অর্থ, অন্য কারও কাছে জবাবদিহি করতে তিনি বাধ্য নন। যেখানে দায়বদ্ধতা নেই, সেখানে কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি সংবাদ সম্মেলন করা নিয়ে নিজের অনীহার কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন, যার মূল কথা সংবাদমাধ্যমের চরিত্র আর আগের মতো নেই। প্রচুর বদলে গেছে।
গণমাধ্যমের চরিত্র আগে কেমন ছিল এবং এখন কেমন হয়েছে, সে বিষয়ে মোদি তার অভিমত খোলাখুলি জানিয়েছেন। তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ‘আজকালকার সাংবাদিকতা নিরপেক্ষ নয়। পক্ষপাতদুষ্ট। সাংবাদিকেরা প্রত্যেকেই নিজস্ব অভিমতের মধ্যে আবদ্ধ। নিরপেক্ষতা বলে যে বিষয়টা ছিল, পক্ষপাতহীনতা ছিল, আজ তা আর নেই। আজ কাউকে সাক্ষাৎকার দিতে বসলেই সবাই জেনে যায় অমুক গত পরশু ওই বিষয়ে টুইট করেছিল। সে তো মোদিকে টেনেই কথা বলবে।’
মোদি বলেন, ‘আগে মিডিয়া ছিল মুখহীন। কে লিখছেন, কী লিখছেন, তার আদর্শ কী, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা ছিল না। কেউ মাথা ঘামাতও না। কিন্তু আজ স্পষ্ট বোঝা যায় কার কী আদর্শ। কার রাজনীতি কী।’
মোদি স্পষ্ট করেই জানান, তিনি এক নতুন সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছেন। মোদি বলেন, ‘আগে এমন একটা ধারণা ছিল, কিচ্ছু করার প্রয়োজন নেই, শুধু মিডিয়াকে হাতে রাখো। নিজের কথাটা তাদের জানিয়ে দাও। তারাই সারা দেশে তা প্রচার করে দেবে। আমি ওই রাস্তায় হাঁটিনি। আমি এক অন্য সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছি। খাটতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। গরিবদের ঘরে ঘরে যেতে হবে। আমিও তো বিজ্ঞান ভবনে (দিল্লির প্রধান সম্মেলনকক্ষ) অনুষ্ঠানের ফিতে কেটে ছবি তুলে তা মিডিয়া মারফত প্রচার করতে পারতাম। কিন্তু তা না করে আমি ঝাড়খন্ডের কোনো এক ছোট জেলায় গিয়ে ছোট কোনো প্রকল্পের জন্য কাজ করেছি। এটাই নতুন সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি মিডিয়ার পছন্দ হলে তারা তা প্রচার করবে। পছন্দ না হলে প্রচার করবে না।’
ওই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী অতীতের স্মৃতিচারণ করেছেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কী করতেন জানিয়ে বলেন, ‘সে সময় জনসভায় গিয়ে জনতাকে জিজ্ঞেস করতাম, কী ভাই, কেউ কালো পতাকা দেখাচ্ছে না কেন? দু–চারটি কালো পতাকা তো রাখবে। যা দেখে খবরের কাগজ লিখবে, মোদি এসেছিলেন। দশজন তাকে কালো পতাকা দেখিয়েছে। না হলে জনতা বুঝবে কী করে যে মোদি এসেছিলেন? কালো পতাকা ছাড়া আমার সভাকে কে গুরুত্ব দেবে? টানা ১০ বছর গুজরাটে আমি এই ভাষণ দিয়ে গেছি। আমার ডেইলি রুটিন ছিল এটা।’
এই কাহিনির পাশাপাশি আরও এক ঘটনা শুনিয়ে তিনি মিডিয়ার ‘চরিত্র’ বুঝিয়েছেন। তার কথায়, ‘একদিন এক গ্রামের লোকজন দেখা করতে এল। সে সময় প্রতি মঙ্গলবার যে কেউ আমার কাছে চলে আসতে পারত। ওই দিন সবার জন্য ছিল অবারিত দ্বার। গ্রামবাসীরা বলল, আপনাকে অভিনন্দন জানাতে এসেছি। কারণ, আমাদের গ্রামে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে এসেছে। গ্রামে এখন ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। আমি বলি, হতেই পারে না। মিথ্যা বলছ তোমরা। শুনে ওরা বলল, না সাহেব। সত্যি। আমি বলি, কই কোনো কাগজে তো এই খবর পড়িনি? শুনে ওরা বলল, সাহেব, রেডিও বা খবরের কাগজে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ চলে আসার খবর দেবে না।’
মোদি বলেন, ‘আগে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল খবরের কাগজ। কাজেই খবরের কাগজ ছাড়া কারও গতি ছিল না। সেটাও ছিল একমুখী। আজ বহু মাধ্যমের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। খবরের কাগজ, টিভি ছাড়া জনতাও আজ তার আওয়াজ পৌঁছে দিচ্ছে। যেকোনো বিষয়ে মানুষ তার মতামত জানাতে পারছে।’
সাক্ষাৎকারের শেষে মোদি বলেন, ইতিহাস তাকে মনে রাখবে, সে জন্য তিনি কাজ করেন না। কাজ করেন দেশের জন্য। তবু কেউ যদি মনে রাখে তা হলে মনে রাখুক কাশ্মীরে ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা। জি–২০–এর দৌলতে ভারতের মাথা উঁচু হওয়ার কথা। মনে রাখুক, বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতি হতে চলা ভারতের কথা।
তার মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেন প্রতিমন্ত্রীরা। তার অনুগত সংবাদমাধ্যমগুলো আজ সারা দেশে ‘গোদি মিডিয়া’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ যে মিডিয়া তার কোলে (গোদি) আশ্রিত। বিরোধীদের অভিযোগ, অন্ধ ও অনুগত মিডিয়ার পছন্দসই সাংবাদিক ছাড়া কাউকে তিনি সাক্ষাৎকার দেন না। প্রশ্নগুলো আগাম পাঠিয়ে দিতে হয়। লিখিত ও অনুমোদিত প্রশ্নের বাইরে বাড়তি বিষয় অবতারণার কোনো অধিকার সাংবাদিকদের নেই। সূত্র : টামইস অব ইন্ডিয়া
প্রকাশক ও সম্পাদক: কবির হোসেন
অফিসঃ ১৮০-১৮১ (৮ম তলা), শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বরণী, বিজয়নগর, ঢাকা – ১০০০
ফোনঃ ০২-২২২২২৮৭৮০, ফ্যাক্সঃ ০২-২২২২২৮৫১৫, মোবাইলঃ ০১৭৪৬-৬৪১২৮১, ০১৮৩৩-৯৩৮৫৭৯
Email : aideshaisomoy1977@gmail.com
২০০৫-২০২৫ © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | একটি গ্লোবাল পাবলিকেশন এন্ড মিডিয়া লিমিটেড প্রতিষ্ঠান