আগামী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর ও নেত্রকোনা এবং সিলেটের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারী বর্ষণ এবং শেরপুর জেলায় কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে এসব এলাকার নদনদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। ইতোমধ্যে শেরপুরের চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ১০টায় এই নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যেখানে গতরাতে ছিল ৩৯ সেন্টিমিটার ওপরে। পাউবো জানিয়েছে, আজ ভোর থেকে মুসলধারে বৃষ্টির পাশাপাশি উজানে ভারী বর্ষণ চলায় নদীগুলোর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বেসরকারি আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘আবহাওয়া ডট কম’-এর প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাহাড়ি ঢলের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার নদনদীগুলোয় পানি হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, আজ দুপুর ১২টার মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে একটানা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর রাডার চিত্রের ভিত্তিতে আবহাওয়াবিদ পলাশ তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে একের পর এক বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবল প্রবাহ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে অতিক্রম করছে। সেই সঙ্গে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলাতেও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত এই তিন বিভাগের জেলাগুলোতে প্রবল বজ্রসহ বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিলেট : উজানে ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল। সোমবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেট বিভাগের সব নদনদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে সিলেটজুড়ে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। পাউবোর তথ্যমতে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগের প্রায় সব নদনদীর পানি বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৩৭ সেন্টিমিটার, ছাতকে ৩৬ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জে ৪৪ সেন্টিমিটার ও দিরাই পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। কুশিয়ারর পানি জকিগঞ্জের আমলশীদে ২৪ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজারের শেওলায় ৪১ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বাড়ে। যাদুকাটা নদীর পানি শক্তিয়ারখোল পয়েন্টে ৯৮ সেন্টিমিটার এবং মনুর পানি মৌলভীবাজার পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার, পিয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাটের জাফলং পয়েন্টে ১০২ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন নদীর পানি জৈন্তাপুরের সারিঘাটে ৮৯ সেন্টিমিটার, গোয়াইনঘাটে ৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এদিকে, উজানে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জের বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ভারতের উমঘট নদী থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জাফলংয়ের জিরোপয়েন্টসহ আশপাশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদীতে ঢল নামায় জাফলং পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শেরপুর : জেলায় টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয়ের উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমেশ্বরী নদীর পানিও বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। অন্যদিকে মহারশি, ভোগাই ও মালিঝি নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে থাকলেও প্রতি ঘণ্টায় পানি বাড়ছে। স্থানীয়রা বলছে এ অবস্থা চলতে থাকলে এ অসমে বড় ধরনের বন্যা হতে পারে।
রংপুর : গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় আড়াই শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বর্ষার আগেই অঝোরধারা এই বৃষ্টিতে রংপুর নগরীর নিম্নাঞ্চলের অনেক স্থান প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ৩০০ হেক্টরের বেশি জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। অপরদিকে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এ নিয়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে গত কয়েক দিন ধরে টানা ভারী বর্ষণের কারণে জেলা শহরের বেশির ভাগ স্থানে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, শহরের খালগুলো দখল করে ভরাট হওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ভারী বৃষ্টিপাত হলেই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় শহরবাসীকে। জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলা শহরগুলোর অবস্থা আরও নাজুক।
কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) : বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানিতে কুতুবদিয়ার ৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এ দ্বীপের চারপাশে রয়েছে পাউবোর প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। ঘূর্ণিঝড় ও অস্বাভাবিক জোয়ারের ঢেউয়ে ওই ৪০ কিলোমিটার ভাঙাচোরা বেড়িবাঁধের বেশির ভাগই খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
কিছুদিন আগে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটায় পরিণত হয়ে ৫ ফুট পানির নিচে ছিল উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের বায়ু বিদ্যুৎসংলগ্ন এলাকা।
প্রকাশক ও সম্পাদক: কবির হোসেন
অফিসঃ ১৮০-১৮১ (৮ম তলা), শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বরণী, বিজয়নগর, ঢাকা – ১০০০
ফোনঃ ০২-২২২২২৮৭৮০, ফ্যাক্সঃ ০২-২২২২২৮৫১৫, মোবাইলঃ ০১৭৪৬-৬৪১২৮১, ০১৮৩৩-৯৩৮৫৭৯
Email : aideshaisomoy1977@gmail.com
২০০৫-২০২৫ © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | একটি গ্লোবাল পাবলিকেশন এন্ড মিডিয়া লিমিটেড প্রতিষ্ঠান