জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ খাতে ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট চূড়ান্ত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে প্রয়োজন হলে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে ‘নির্বাচন’ খাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার ৯২২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার অনুরোধ জানিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। এর ভিত্তিতি দুই দফা নির্বাচন কমিশন, অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আলোচনার পর এ খাতে ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাবদ খরচ ‘নির্বাচন’ খাত থেকে নির্বাহ করা হয়।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, এবার প্রায় সব ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম রাখা হচ্ছে। তবে প্রয়োজন হলে পরবর্তী সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য অন্য খাত থেকেও টাকা এনে খরচ করা যেতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অনুকূলে মোট ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশনের মোট বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল বাজেটে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। তবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কারণে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় নির্বাচন না থাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয় খাতে ব্যয় হয় মাত্র ৮৭৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ জানুয়ারি নির্বাচনে ২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকার ব্যয় ধরা হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ গতকাল রোববার সমকালকে বলেন, বাজেটে বরাদ্দ যাই থাক না কেন, প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চাইলেই সরকার টাকা দেবে। কারণ, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব ধরনের নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে কমিশন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের খরচ যা হবে, তা সরকারকে দিতে হবে।
নির্বাচনী পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ম্যান্ডেট হাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর স্থানীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সরকারকে চাহিদা দেবে। সরকারি সে চাহিদার ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সুতরাং সরকারি চাহিদার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তার পক্ষে মতামত দেওয়া সম্ভব নয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জুন মাস আগামী অর্থবছরের শেষ মাস।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে ‘নির্বাচন’ খাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার ৯২১ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার টাকার চাহিদা দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাতে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দরকার বলা হয়েছিল। স্থানীয় নির্বাচনের জন্য ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এ ছাড়া ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র খাতে ৬৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার চাহিদা ছিল।
গত ১৬ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার ঘোষিত সময়সীমা ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী জুন-জুলাই মাসের মধ্যে এ-সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রস্তুতির অন্যতম বষয় হলো প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। ভোটের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ঢাকনা, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, কয়েক ধরনের সিল, গালা, স্ট্যাম্প প্যাড, কালি, থলে, ১৭ ধরনের খাম, কাগজ, কলম, ছুরি, মোমবাতি, দেশলাইসহ অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজ সাধারণত নেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে। ভোটের বেশ আগেই তাদের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপা হয় সরকারি ছাপাখানায়। এর বাইরে অনেক সামগ্রী কিনতে হয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। এ কারণে কিছুটা লম্বা সময় প্রয়োজন হয় কেনাকাটায়।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, উপজেলা-জেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ, উপনির্বাচনসহ অন্তত আড়াই হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: কবির হোসেন
অফিসঃ ১৮০-১৮১ (৮ম তলা), শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বরণী, বিজয়নগর, ঢাকা – ১০০০
ফোনঃ ০২-২২২২২৮৭৮০, ফ্যাক্সঃ ০২-২২২২২৮৫১৫, মোবাইলঃ ০১৭৪৬-৬৪১২৮১, ০১৮৩৩-৯৩৮৫৭৯
Email : aideshaisomoy1977@gmail.com
২০০৫-২০২৫ © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | একটি গ্লোবাল পাবলিকেশন এন্ড মিডিয়া লিমিটেড প্রতিষ্ঠান