বোরোর ভালো উৎপাদনের ফলে ধানের সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু ধান থেকে চাল হয়ে বাজারে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতেই যত বিপত্তি। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে চালের দাম। ভরা মৌসুমে কম দামে পাওয়ার বদলে বেশি দামে কিনে খেতে হচ্ছে ভোক্তাদের। বোরোর নতুন চাল বাজারে ওঠার পর যে সরু চালের দাম কমে ৭৫ টাকা হয়েছিল, এখন তা বেড়ে ৮০ থেকে ৮২ টাকায় পৌঁছেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভালো উৎপাদনে পণ্যের দাম কমে আসে- এ সমীকরণে এখন আর বাজার চলছে না। বোরোর সন্তোষজনক উৎপাদনে চালের দাম যেখানে কমার কথা, সেখানে উল্টো বেশি দামে কিনে খেতে হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি। তারা মজুদ নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ধান-চাল মজুদ করছে এবং বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে ধান-চালের বাজারে নজরদারির ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। প্রশাসনের ভূমিকাও দুর্বল। আর এর সুযোগ নিয়ে বারবার একই কায়দায় চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে দুষ্টু চক্রগুলো। অতীতেও যারা সক্রিয় ছিল, তারা এখনও রয়ে গেছে। সর্বশেষ বোরো মৌসুমের নতুন চাল ওঠার পর প্রথম দিকে বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও এখন আবার উল্টো পথে ছুটছে। ভালো উৎপাদনের পর সরু চালের দাম ৬২ থেকে ৬৪ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। সেখানে ভরা মৌসুমে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক। মাঝারি ও মোটা চালের বাজারেও একই চিত্র। ধান-চালের বাজারে নজরদারি না বাড়ালে এগুলো বন্ধ হবে না।
ধান উৎপাদনে দেশে সর্বাধিক উৎপাদনশীল মৌসুম হচ্ছে বোরো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫০ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ টন। এখন পর্যন্ত যতটুকু অর্জিত হয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী অর্জিত হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টন।
অধিদপ্তরের সরেজমিন শাখার অতিরিক্ত পরিচালক (সম্প্রসারণ ও কো-অর্ডিনেশন) ড. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, এবার আবহাওয়াসহ সবকিছু অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো। দেশের বিভিন্ন স্থানে সামান্য যে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ক্ষতিকর তেমন প্রভাব ফেলেনি। এবার উৎপাদন সন্তোষজনক।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরো মৌসুমে ভালো ফলন হয় এবং তাতে চালের দাম কমে আসে। এ সময় নতুন চাল ওঠায় বাজারে অনেকটা স্বস্তি মেলে। কিন্তু এবার চিত্রপট পুরোটাই ভিন্ন।
কথা হলে কারওয়ানবাজারের লাকসাম ট্রেডার্সের পাইকারি ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, চালের দাম বৃদ্ধি বা কমা এখন আর ফলনের ওপর নির্ভর করে না। ধান-চালের ব্যবসায়ীরা যেভাবে চালায় সেভাবেই চলে। এভাই চলে আসছে দীর্ঘদিন। ভালো উৎপাদন বা আমদানি কোনো কিছুই বাজারে প্রভাব ফেলে না। বড় মিলগুলো যে দামে বিক্রি করে, সে দামে আমাদের কিনতে হয়।
রাজধানীর খুচরা বিক্রেতারা জানান, কোরবানির ঈদের পরপরই সরু চালের বস্তায় (৫০ কেজি) ৩৫০ পর্যন্ত বেড়ে যায়। কোথাও কোথাও আরও বেশি বেড়ে যায়। এখনও বাজার বাড়তি রয়েছে।
মালিবাগ বাজারের গাজী স্টোরের ব্যবসায়ী মো. মাসুদ রানা বলেন, নতুন চাল ওঠার পর মিনিকেটের দাম কমে ৭৫ টাকা বিক্রি করেছি। এখন তা ৮০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। ভালো মানের মাঝারি চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৭০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। মিলগুলো থেকে দাম বাড়ানোয় আমাদেরকেও বাড়াতে হয়েছে।
ভালো উৎপাদনে সরু ধানের সরবরাহও বেড়েছে বলে জানিয়েছে চালকলগুলো। তবে একদিকে মিলে বাড়তি খরচ, অপরদিকে ধানের বাজারে অস্থিরতার কারণে চাল তৈরিতে খরচ বেড়েছে বলে দাবি করছেন তারা।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লায়েক আলী বলেন, মিলগুলোতেও খরচ বেড়েছে ঠিক। কিন্তু তার চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে ধানের বাজারে দর হঠাৎ ওঠানামা করছে। ধানের দাম হঠাৎ প্রতি মণে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় চালের দামও বেড়ে গেছে। যদিও এখন আবার কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, ধানের দাম বেশি হলে কৃষকরা লাভবান হন। কিন্তু এখন যে ধানের দাম বাড়ানো হচ্ছে এগুলো একশ্রেণির অবৈধ মজুদদাররা করছে। এর সঙ্গে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও জড়িত। এরাই বারবার এ কাজ করে। এসব ধান মজুদদারদের কোনো কাগজপত্রও নেই। এরা কোনো নীতিমালার তোয়াক্কা করে না।
প্রকাশক ও সম্পাদক: কবির হোসেন
অফিসঃ ১৮০-১৮১ (৮ম তলা), শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বরণী, বিজয়নগর, ঢাকা – ১০০০
ফোনঃ ০২-২২২২২৮৭৮০, ফ্যাক্সঃ ০২-২২২২২৮৫১৫, মোবাইলঃ ০১৭৪৬-৬৪১২৮১, ০১৮৩৩-৯৩৮৫৭৯
Email : aideshaisomoy1977@gmail.com
২০০৫-২০২৫ © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | একটি গ্লোবাল পাবলিকেশন এন্ড মিডিয়া লিমিটেড প্রতিষ্ঠান