যশোরের কৃতি সন্তান ; দিলারা হাশেম, ভয়েস অফ আমেরিকা
১৯৮০ এর দশকে ভয়েস অফ আমেরিকার এক অনন্য, অমর কণ্ঠ দিলারা হাশেম। নিয়মিত রাত্র ১০ টায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রচারিত ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা বিভাগের তিনিই ছিলেন অত্যন্ত পরিচিত এক কণ্ঠস্বর।
তার অসামান্য অবদান , আটলান্টিকের পার থেকে ভেসে আসা বাংলা বিশ্বসংবাদ বাংলাভাষী মানুষের জন্য ছিল বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের অসাধারণ উৎস। এ সময় সংবাদ শিল্পী এ দিলারা হাশেমকে চিনত না এমন ব্যক্তির পরিচয় ছিল নিতান্তই দুর্লভ। রেডিও খুলে কান পেতে তার সংবাদ পাঠ শুনতাম।
স্পষ্ট উচ্চারণ, অপূর্ব বাচনভঙ্গি ও অসাধারণ কন্ঠস্বর নিয়ে তিনি সংবাদ পড়তেন। সত্যিই মুগ্ধ হতাম খুঁজে পেতাম অন্য এক জগত!
দিলারা হাশেম যশোরেরই মেয়ে, এ অঞ্চলের কৃতি সন্তান। আমাদের একান্ত কাছেরই প্রতিবেশী। তার জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৫ আগস্ট, যশোর জেলার মনিরামপুর থানাধীন মশ্বিমনগর ইউনিয়নের, চাকলা গ্রাম। চাকলা পাল পাড়ার সামনে বিশাল আমবাগান তারই পৈতৃক ভিটামাটি বসতবাড়ি। বাবা ছিলেন বজলুর রহমান খান।
অতি-লাবণ্য, সুশ্রী ও কোমল স্বভাবের মেয়ে -কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক এ দিলারা হাশেম ছিলেন অনন্য মেধাবী ও কৃতি-সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৬ সালে ইংরেজি সাহিত্যে বি. এ. অনার্স ও ১৯৫৭ সালে এম. এ. সম্পন্ন করার পর করাচী বেতার বাংলা সংবাদ পাঠিকা হিসাবে তার কর্ম জীবন শুরু করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছোট গল্প লেখার মধ্য দিয়ে সাহিত্য জীবন শুরু করেন।
প্রখ্যাত সাহিত্য প্রেমী এ লেখিকা, তার প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থ রুশ ও চীনা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‘ঘর মন জানালা’ ১৯৭৩ সালে চলচ্চিত্র হয়েও মুক্তি পায়। উপন্যাসের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্যে ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৭২ সাল সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্টে পাড়ি দেন, ওয়াশিংটনে বসবাস ও কর্মজীবন শুরু করেন।
বিশ্বের সর্ব বৃহৎ বেতার প্রচার ভয়েস অফ আমেরিকায় সংবাদ পাঠক হয়ে কাজ করেন। এ সময় প্রবাসী হয়েও বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর হৃদয়ের টান অক্ষুণ্ণ রেখে নিরবচ্ছিন্ন-ভাবে বাংলা সাহিত্য চর্চা করে গেছেন। ইতালি, ফ্রান্স, হল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, জার্মানী, চেকোস্লোভাকিয়াসহ ইউরোপের বহু দেশ এবং চীন, জাপান ও কমিউনিস্ট শাসনামলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণ করেন।
বর্ণাঢ্য জীবন ও বিচিত্র ধারায়, তার লেখার মূল উপাধ্যে মূলত নগর জীবন ও বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজের সুখ-দুঃখ, আশা-হতাশার স্পষ্ট চিত্র তিনি তুলে ধরেন। ১৯৮২ সালে ভয়েস অব আমেরিকায় স্থায়ীভাবে যোগ দেন। অবসরে যান ২০১১ সালে। ২০ মার্চ ২০২২ সালে ৮৬ বছর বয়সে ওয়াশিংটনের নিজ বাসায় দিলারা হাশেম তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
মনিরামপুর , যশোরের এ সুখ্যাত কৃতীসন্তানের পরিচয় ও নাম হয়তো অনেকের কাছে অজানা। নুতন প্রজন্মের কাছে তিনি রয়েগেছেন সত্যিই একান্ত অচেনা এক ব্যক্তিত্ব কিন্তু তিনি যে আমাদের অনেক কাছের এক জন কৃতিমুখ, সামনে চলার উৎস, পথ নির্দেশক সে কথা অতিস্বরণীয়।
প্রকাশক ও সম্পাদক: কবির হোসেন
অফিসঃ ১৮০-১৮১ (৮ম তলা), শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বরণী, বিজয়নগর, ঢাকা – ১০০০
ফোনঃ ০২-২২২২২৮৭৮০, ফ্যাক্সঃ ০২-২২২২২৮৫১৫, মোবাইলঃ ০১৭৪৬-৬৪১২৮১, ০১৮৩৩-৯৩৮৫৭৯
Email : aideshaisomoy1977@gmail.com
২০০৫-২০২৫ © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | একটি গ্লোবাল পাবলিকেশন এন্ড মিডিয়া লিমিটেড প্রতিষ্ঠান