ঢাকা ১২:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক রানওয়েতেই চলছে শাহজালাল, বিঘ্নিত সেবা

এই দেশ এই সময় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১০:৩৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫ ৩৯ বার পঠিত

আকাশপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চলছে একটি মাত্র রানওয়ে নিয়ে। এটি দিয়েই চলছে যাত্রী পরিবহন, কার্গো, প্রশিক্ষণ, হেলিকপ্টারসহ সব ধরনের বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ। সামরিক ও বেসামরিক বিমানের জন্য নেই আলাদা ব্যবস্থা। এ কারণে উড়োজাহাজের কার্যক্রম পরিচালনায় বাঁধছে জট। এতে একদিকে বিঘ্নিত হচ্ছে সেবা, অন্যদিকে বিলম্বিত হচ্ছে ফ্লাইট চলাচল। সমস্যা সমাধানে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ দীর্ঘদিন পড়ে আছে হিমঘরে। আদতেও বাস্তবায়ন হবে কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। অথচ এখান থেকে প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ ফ্লাইট চলাচল করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে রানওয়ে একটি হওয়ায় ফ্লাইট পরিচালনায় নানা বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে পিক আওয়ারের সময় হিমশিম খেতে হয়। আর ভিভিআইপি ফ্লাইট শিডিউল থাকলে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট রানওয়ে বন্ধ রাখতে হয়। তখন ফ্লাইট জট সৃষ্টি হয়। একই সময় একাধিক ফ্লাইটের উড্ডয়ন থাকলে উড়োজাহাজগুলোকে সিরিয়াল ধরে দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকতে হয়। অন্যদিকে ল্যান্ডিংয়ের অনুমতি না পেলে আকাশে ‘গো-অ্যারাউন্ড’ করতে হয়। এতে এয়ারলাইনসগুলোর জ্বালানি খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখতেও বেগ পেতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থায় তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে সংকট আরও বাড়বে। কারণ তখন বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি ফ্লাইটের সংখ্যাও বাড়বে। ফলে রানওয়ের ওপর চাপও বেড়ে যাবে, যা সামলানো কঠিন হবে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, পরিকল্পিতভাবে টার্মিনাল-৩ নির্মাণ করায় যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি নিশ্চিত হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রানওয়ে। একটি রানওয়ে হওয়ার কারণে একসঙ্গে প্লেন টেকঅফ-ল্যান্ডিং করতে পারছে না। একসঙ্গে যদি দুই-তিনটি এয়ারক্রাফট আসে তাহলে তাদের অপেক্ষা করতে হয়। তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে ঢাকা এয়ারপোর্ট খুব ব্যস্ত এয়ারপোর্ট। যখন পিক টাইম থাকে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করে, তখন দেখা যায় যে প্লেনগুলো রানওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার কোনো কারণে যদি রানওয়েতে দুর্ঘটনা ঘটে, একটা পশুপাখি ঢুকে পড়ে তাহলে পুরো রানওয়ে বন্ধ থাকে। যদি রানওয়েতে কোনো দুর্ঘটনা হয় তাহলে দেখা যায় এক-দুই-তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এ সমস্যা সমাধানে শাহজালালে নতুন একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট রানওয়ের খুব দরকার।

ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে একাধিক রানওয়ে থাকলেও বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দর একটি মাত্র রানওয়ে নিয়ে চলছে। ফলে যোগাযোগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিভিন্ন সেবায় পিছিয়ে পড়ছে দেশ। অন্যদিকে অনেক দেশের বিমানবন্দরের রানওয়ে ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেমের (আইএলএস) উন্নত প্রযুক্তির আইএলএস-৩ ক্যাটাগরিতে চলছে। অথচ শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ে এখনও আইএলএস-২ ক্যাটাগরিতে নিজের অবস্থান ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছে। এর মধ্যে চলতি বছরেই বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসছে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা আইসিএও। বিমানবন্দরের রানওয়ে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা যাচাই করবে সংস্থাটি। এ নিয়ে চাপে রয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, শাহজালালের বিদ্যমান রানওয়েটি ৩ হাজার ২০০ মিটার দীর্ঘ। কিছু বড় উড়োজাহাজ ছাড়া প্রায় সব ধরনের উড়োজাহাজই ওঠানামা করতে পারে বর্তমান রানওয়েতে। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে ৩৬টি বিদেশি কমার্শিয়াল এয়ারলাইনস, আটটি কার্গো এয়ারলাইনস, চারটি দেশীয় এয়ারলাইনস এবং হেলিকপ্টারসহ ১৩টি এভিয়েশন প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ে চালু হয় ১৯৮০ সালে। ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ের মেরামতের কাজ করা হয়। ১০ বছর মেয়াদি রানওয়ের মেরামতের আয়ু শেষ হয় ২০০৬ সালে। পরবর্তী সময়ে আয়ুষ্কাল পার হওয়ার পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালে আরেক দফায় রানওয়েটি মেরামত করা হয়। ২০২৬ সালের পরই রানওয়ের আয়ুষ্কাল শেষ হচ্ছে। এরপর নিরাপদ উড্ডয়নের জন্য বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে।

এ বিষয়ে বেবিচকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া দায়িত্ব ছাড়ার আগে আমাদের সময়কে বলেন, দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের সুযোগ নেই। কারণ জায়গা স্বল্পতায় স্বাধীন রানওয়ে করা সম্ভব না হওয়ায় এটি নির্মাণে যে ব্যয় হবে, তার তুলনায় সুবিধা পাওয়া যাবে অনেক কম। এ অবস্থায় বিদ্যমান রানওয়ের পূর্ণ ব্যবহার করতে এটিএম ও স্লট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উন্নত করার দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধু ব্যবস্থাপনা উন্নত করেই বিদ্যমান রানওয়ে দিয়ে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত যাত্রী চাহিদা মেটানো সম্ভব।

এদিকে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণ সম্ভব বলে মনে করেন বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, আমার দায়িত্বকালে এ নিয়ে পরিকল্পনা করেছিলাম, ফিজিবিলিটি স্টাডিও করেছিলাম। থার্ড টার্মিনাল সম্পন্ন করার পরে এটা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এটা প্লানে অন্তর্ভুক্তও করে এসেছিলাম। কিন্তু আমি দায়িত্ব ছাড়ার পর যিনি এসেছেন তিনি না বুঝেই সবকিছু বন্ধ করে দেন।

তিনি আরও বলেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট নয়, আমরা ডিপেন্ডেন্ট রানওয়ে করার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। অপারেশনাল কাজগুলোর অলটারনেট হিসেবে এটা ব্যবহার হতো। এটা দিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ফ্লাইট বাড়ানো সম্ভব ছিল। রানওয়ে কোনো কারণে ব্লক হয়ে গেলে এই রানওয়ে দিয়ে নির্বিঘ্নে ফ্লাইট চলাচল করতে পারত। এটা না হলে, ২০২৭ সালে বর্তমান রানওয়েটির বড় ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। তখন কী হবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরাও মনে করছেন, থার্ড টার্মিনাল চালু হলে বিমানবন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি হবে, উড়োজাহাজ ওঠানামাও বাড়বে। বাড়তি ফ্লাইটের চাপ সামাল দিতে আরেকটি বিকল্প ‘ডিপেন্ডেন্ট রানওয়ে’ হলে ফ্লাইট পরিচালনা কিছুটা সহজতর হতো। যদি তা না হয়, তাহলে তৃতীয় টার্মিনালের পূর্ণ সক্ষমতার ব্যবহার নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

এক রানওয়েতেই চলছে শাহজালাল, বিঘ্নিত সেবা

আপডেট সময় : ১০:৩৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

আকাশপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চলছে একটি মাত্র রানওয়ে নিয়ে। এটি দিয়েই চলছে যাত্রী পরিবহন, কার্গো, প্রশিক্ষণ, হেলিকপ্টারসহ সব ধরনের বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ। সামরিক ও বেসামরিক বিমানের জন্য নেই আলাদা ব্যবস্থা। এ কারণে উড়োজাহাজের কার্যক্রম পরিচালনায় বাঁধছে জট। এতে একদিকে বিঘ্নিত হচ্ছে সেবা, অন্যদিকে বিলম্বিত হচ্ছে ফ্লাইট চলাচল। সমস্যা সমাধানে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ দীর্ঘদিন পড়ে আছে হিমঘরে। আদতেও বাস্তবায়ন হবে কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। অথচ এখান থেকে প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ ফ্লাইট চলাচল করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে রানওয়ে একটি হওয়ায় ফ্লাইট পরিচালনায় নানা বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে পিক আওয়ারের সময় হিমশিম খেতে হয়। আর ভিভিআইপি ফ্লাইট শিডিউল থাকলে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট রানওয়ে বন্ধ রাখতে হয়। তখন ফ্লাইট জট সৃষ্টি হয়। একই সময় একাধিক ফ্লাইটের উড্ডয়ন থাকলে উড়োজাহাজগুলোকে সিরিয়াল ধরে দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকতে হয়। অন্যদিকে ল্যান্ডিংয়ের অনুমতি না পেলে আকাশে ‘গো-অ্যারাউন্ড’ করতে হয়। এতে এয়ারলাইনসগুলোর জ্বালানি খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখতেও বেগ পেতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থায় তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে সংকট আরও বাড়বে। কারণ তখন বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি ফ্লাইটের সংখ্যাও বাড়বে। ফলে রানওয়ের ওপর চাপও বেড়ে যাবে, যা সামলানো কঠিন হবে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, পরিকল্পিতভাবে টার্মিনাল-৩ নির্মাণ করায় যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি নিশ্চিত হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রানওয়ে। একটি রানওয়ে হওয়ার কারণে একসঙ্গে প্লেন টেকঅফ-ল্যান্ডিং করতে পারছে না। একসঙ্গে যদি দুই-তিনটি এয়ারক্রাফট আসে তাহলে তাদের অপেক্ষা করতে হয়। তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে ঢাকা এয়ারপোর্ট খুব ব্যস্ত এয়ারপোর্ট। যখন পিক টাইম থাকে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করে, তখন দেখা যায় যে প্লেনগুলো রানওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার কোনো কারণে যদি রানওয়েতে দুর্ঘটনা ঘটে, একটা পশুপাখি ঢুকে পড়ে তাহলে পুরো রানওয়ে বন্ধ থাকে। যদি রানওয়েতে কোনো দুর্ঘটনা হয় তাহলে দেখা যায় এক-দুই-তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এ সমস্যা সমাধানে শাহজালালে নতুন একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট রানওয়ের খুব দরকার।

ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে একাধিক রানওয়ে থাকলেও বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দর একটি মাত্র রানওয়ে নিয়ে চলছে। ফলে যোগাযোগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিভিন্ন সেবায় পিছিয়ে পড়ছে দেশ। অন্যদিকে অনেক দেশের বিমানবন্দরের রানওয়ে ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেমের (আইএলএস) উন্নত প্রযুক্তির আইএলএস-৩ ক্যাটাগরিতে চলছে। অথচ শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ে এখনও আইএলএস-২ ক্যাটাগরিতে নিজের অবস্থান ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছে। এর মধ্যে চলতি বছরেই বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসছে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা আইসিএও। বিমানবন্দরের রানওয়ে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা যাচাই করবে সংস্থাটি। এ নিয়ে চাপে রয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, শাহজালালের বিদ্যমান রানওয়েটি ৩ হাজার ২০০ মিটার দীর্ঘ। কিছু বড় উড়োজাহাজ ছাড়া প্রায় সব ধরনের উড়োজাহাজই ওঠানামা করতে পারে বর্তমান রানওয়েতে। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে ৩৬টি বিদেশি কমার্শিয়াল এয়ারলাইনস, আটটি কার্গো এয়ারলাইনস, চারটি দেশীয় এয়ারলাইনস এবং হেলিকপ্টারসহ ১৩টি এভিয়েশন প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ে চালু হয় ১৯৮০ সালে। ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ের মেরামতের কাজ করা হয়। ১০ বছর মেয়াদি রানওয়ের মেরামতের আয়ু শেষ হয় ২০০৬ সালে। পরবর্তী সময়ে আয়ুষ্কাল পার হওয়ার পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালে আরেক দফায় রানওয়েটি মেরামত করা হয়। ২০২৬ সালের পরই রানওয়ের আয়ুষ্কাল শেষ হচ্ছে। এরপর নিরাপদ উড্ডয়নের জন্য বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে।

এ বিষয়ে বেবিচকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া দায়িত্ব ছাড়ার আগে আমাদের সময়কে বলেন, দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের সুযোগ নেই। কারণ জায়গা স্বল্পতায় স্বাধীন রানওয়ে করা সম্ভব না হওয়ায় এটি নির্মাণে যে ব্যয় হবে, তার তুলনায় সুবিধা পাওয়া যাবে অনেক কম। এ অবস্থায় বিদ্যমান রানওয়ের পূর্ণ ব্যবহার করতে এটিএম ও স্লট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উন্নত করার দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধু ব্যবস্থাপনা উন্নত করেই বিদ্যমান রানওয়ে দিয়ে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত যাত্রী চাহিদা মেটানো সম্ভব।

এদিকে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণ সম্ভব বলে মনে করেন বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, আমার দায়িত্বকালে এ নিয়ে পরিকল্পনা করেছিলাম, ফিজিবিলিটি স্টাডিও করেছিলাম। থার্ড টার্মিনাল সম্পন্ন করার পরে এটা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এটা প্লানে অন্তর্ভুক্তও করে এসেছিলাম। কিন্তু আমি দায়িত্ব ছাড়ার পর যিনি এসেছেন তিনি না বুঝেই সবকিছু বন্ধ করে দেন।

তিনি আরও বলেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট নয়, আমরা ডিপেন্ডেন্ট রানওয়ে করার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। অপারেশনাল কাজগুলোর অলটারনেট হিসেবে এটা ব্যবহার হতো। এটা দিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ফ্লাইট বাড়ানো সম্ভব ছিল। রানওয়ে কোনো কারণে ব্লক হয়ে গেলে এই রানওয়ে দিয়ে নির্বিঘ্নে ফ্লাইট চলাচল করতে পারত। এটা না হলে, ২০২৭ সালে বর্তমান রানওয়েটির বড় ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। তখন কী হবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরাও মনে করছেন, থার্ড টার্মিনাল চালু হলে বিমানবন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি হবে, উড়োজাহাজ ওঠানামাও বাড়বে। বাড়তি ফ্লাইটের চাপ সামাল দিতে আরেকটি বিকল্প ‘ডিপেন্ডেন্ট রানওয়ে’ হলে ফ্লাইট পরিচালনা কিছুটা সহজতর হতো। যদি তা না হয়, তাহলে তৃতীয় টার্মিনালের পূর্ণ সক্ষমতার ব্যবহার নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।