ঢাকা ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জামায়াত যদি কখনো ভুল করে থাকে, তার জন্য শর্তহীনভাবে ক্ষমা চাই: শফিকুর রহমান

এই দেশ এই সময় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৩:৩১:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ২৭ বার পঠিত

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, কেবল একাত্তরের ভূমিকার জন্য নয়, সাতচল্লিশের ভারতভাগ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোনো ‘ভুল’ করে থাকলে তার জন্য শর্তহীনভাবে ক্ষমা চাইছে জামায়াত।
বুধবার (স্থানীয় সময় ২২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এই বক্তব্য দেন। সাতচল্লিশের দেশভাগ থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময় পর্যন্ত জামায়াতের ভুলত্রুটি নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে আমির বলেন, “আমরা মানুষ, ভুল হতেই পারে। আমাদের কোনো সিদ্ধান্তে যদি জাতির ক্ষতি হয়ে থাকে, তার জন্য আমরা নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাই। ক্ষমা চাওয়ায় কোনো লজ্জা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু একাত্তর নয়, ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জামায়াতের কর্মকাণ্ডে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমরা সেই কষ্টের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত বা অবস্থান যদি ভুল হয়ে থাকে, আমরা জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটি জামায়াতের পক্ষ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনা। এর আগে চলতি বছরের ২৭ মে যুদ্ধাপরাধ মামলায় এটিএম আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়ার পর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে আমির শফিকুর রহমান বলেন, “মানুষ হিসেবে আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নই। যে কোনো সময়, যে কোনোভাবে যদি কারও কষ্ট দিয়ে থাকি, বিনা শর্তে ক্ষমা চাই।”
তবে তখন তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করেননি। এবার যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিনেই সেই অবস্থান স্পষ্ট করলেন।
তিনি বলেন, “একাত্তরে জামায়াতেরও ভূমিকা ছিল। আমরা তখন মনে করতাম পাকিস্তান ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। কিন্তু পরে দেখা গেছে, বাস্তবতা অন্যরকম ছিল। আজ স্বীকার করছি, তখন যদি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী অবস্থান নিতে পারতাম, ভালো হতো।”
“আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই” জামায়াত আমির বলেন, “আমরা কোনোদিন দাবি করিনি যে আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। ভুল হয়ে থাকলে তা শুধরে নেওয়াই শ্রেয়। যারা সেই ভুল শুধরে দিয়েছেন, আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আর যাঁরা আমাদের কারণে কষ্ট পেয়েছেন, তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”
তিনি আরও বলেন, “একটা জাতি তখন পাকিস্তানের পতাকার নিচে ছিল। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০ শতাংশ অঞ্চলে পাকিস্তানের পতাকা উড়েছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে সব পাল্টে গেছে—এটাই ছিল বাস্তবতা। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তখনকার নেতৃত্ব যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা নিয়ে এখনকার প্রজন্ম প্রশ্ন তুলতে পারে। সেই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে আমি বলছি—যদি ক্ষতি হয়ে থাকে, আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ও রাজনৈতিক অবস্থান বিএনপির সঙ্গে বর্তমান সম্পর্কের বিষয়ে এক প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা দুটি স্বতন্ত্র দল। অতীতে জাতীয় প্রয়োজনে একসঙ্গে কাজ করেছি। এখন প্রত্যেক দল তাদের নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমরা কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলি না। আমরা নীতিগত অবস্থান নিয়ে কথা বলি। কারও কাজ ভালো হলে প্রশংসা করব, ক্ষতিকর হলে সমালোচনা করব—এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নে জামায়াত আমির বলেন, “প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না। আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে চাই। একইভাবে আমরাও চাই, বাংলাদেশকেও তারা সমান মর্যাদা দিক। সম্পর্কটি হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, বাংলাদেশ হবে বাংলাদেশের মতো—না আফগান, না ইরান, না পাকিস্তান। আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টি নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই, যেখানে দল বা ধর্মের বিভাজন থাকবে না।”
যুক্তরাষ্ট্র সফর যুক্তরাষ্ট্র সফরে শফিকুর রহমানের সঙ্গে জামায়াতের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সমন্বয়কারী নাকিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। কুইন্সের ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনা পার্টি হলে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রবাসী সাংবাদিকরা অংশ নেন।
সফর চলাকালীন সময়ে তিনি মার্কিন প্রশাসনের নীতি–নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দেন। আগামী ২৬ অক্টোবর তিনি নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের এক সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জামায়াত যদি কখনো ভুল করে থাকে, তার জন্য শর্তহীনভাবে ক্ষমা চাই: শফিকুর রহমান

আপডেট সময় : ০৩:৩১:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, কেবল একাত্তরের ভূমিকার জন্য নয়, সাতচল্লিশের ভারতভাগ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোনো ‘ভুল’ করে থাকলে তার জন্য শর্তহীনভাবে ক্ষমা চাইছে জামায়াত।
বুধবার (স্থানীয় সময় ২২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এই বক্তব্য দেন। সাতচল্লিশের দেশভাগ থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময় পর্যন্ত জামায়াতের ভুলত্রুটি নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে আমির বলেন, “আমরা মানুষ, ভুল হতেই পারে। আমাদের কোনো সিদ্ধান্তে যদি জাতির ক্ষতি হয়ে থাকে, তার জন্য আমরা নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাই। ক্ষমা চাওয়ায় কোনো লজ্জা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু একাত্তর নয়, ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জামায়াতের কর্মকাণ্ডে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমরা সেই কষ্টের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত বা অবস্থান যদি ভুল হয়ে থাকে, আমরা জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটি জামায়াতের পক্ষ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনা। এর আগে চলতি বছরের ২৭ মে যুদ্ধাপরাধ মামলায় এটিএম আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়ার পর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে আমির শফিকুর রহমান বলেন, “মানুষ হিসেবে আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নই। যে কোনো সময়, যে কোনোভাবে যদি কারও কষ্ট দিয়ে থাকি, বিনা শর্তে ক্ষমা চাই।”
তবে তখন তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করেননি। এবার যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিনেই সেই অবস্থান স্পষ্ট করলেন।
তিনি বলেন, “একাত্তরে জামায়াতেরও ভূমিকা ছিল। আমরা তখন মনে করতাম পাকিস্তান ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। কিন্তু পরে দেখা গেছে, বাস্তবতা অন্যরকম ছিল। আজ স্বীকার করছি, তখন যদি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী অবস্থান নিতে পারতাম, ভালো হতো।”
“আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই” জামায়াত আমির বলেন, “আমরা কোনোদিন দাবি করিনি যে আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। ভুল হয়ে থাকলে তা শুধরে নেওয়াই শ্রেয়। যারা সেই ভুল শুধরে দিয়েছেন, আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আর যাঁরা আমাদের কারণে কষ্ট পেয়েছেন, তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”
তিনি আরও বলেন, “একটা জাতি তখন পাকিস্তানের পতাকার নিচে ছিল। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০ শতাংশ অঞ্চলে পাকিস্তানের পতাকা উড়েছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে সব পাল্টে গেছে—এটাই ছিল বাস্তবতা। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তখনকার নেতৃত্ব যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা নিয়ে এখনকার প্রজন্ম প্রশ্ন তুলতে পারে। সেই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে আমি বলছি—যদি ক্ষতি হয়ে থাকে, আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ও রাজনৈতিক অবস্থান বিএনপির সঙ্গে বর্তমান সম্পর্কের বিষয়ে এক প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা দুটি স্বতন্ত্র দল। অতীতে জাতীয় প্রয়োজনে একসঙ্গে কাজ করেছি। এখন প্রত্যেক দল তাদের নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমরা কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলি না। আমরা নীতিগত অবস্থান নিয়ে কথা বলি। কারও কাজ ভালো হলে প্রশংসা করব, ক্ষতিকর হলে সমালোচনা করব—এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নে জামায়াত আমির বলেন, “প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না। আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে চাই। একইভাবে আমরাও চাই, বাংলাদেশকেও তারা সমান মর্যাদা দিক। সম্পর্কটি হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, বাংলাদেশ হবে বাংলাদেশের মতো—না আফগান, না ইরান, না পাকিস্তান। আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টি নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই, যেখানে দল বা ধর্মের বিভাজন থাকবে না।”
যুক্তরাষ্ট্র সফর যুক্তরাষ্ট্র সফরে শফিকুর রহমানের সঙ্গে জামায়াতের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সমন্বয়কারী নাকিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। কুইন্সের ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনা পার্টি হলে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রবাসী সাংবাদিকরা অংশ নেন।
সফর চলাকালীন সময়ে তিনি মার্কিন প্রশাসনের নীতি–নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দেন। আগামী ২৬ অক্টোবর তিনি নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের এক সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।