বসুন্ধরার সেই বৈঠক ঘিরে তোলপাড়: সেনা কর্মকর্তা আটক, কী বলছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী?

- আপডেট সময় : ১২:৩০:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫ ৪ বার পঠিত

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে অংশ নেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগে সেনাবাহিনীর একজন মেজরকে আটক করা হয়েছে। একই ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই সেনা কর্মকর্তাকে গত ১৭ জুলাই তার ঢাকার উত্তরাস্থ বাসা থেকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে দুটি পৃথক তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছে, ‘রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত অভিযোগ’ এবং ‘কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকা’— এই দুটি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হচ্ছে। আইএসপিআর আরও জানায়, ‘প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পূর্ণ তদন্ত শেষে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে উক্ত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
যেভাবে প্রকাশ হয় বৈঠকের তথ্য
পুলিশের ভাষ্যমতে, বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিকটবর্তী ‘কেবি কনভেনশন হল’ ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। শামিমা নাসরিন শম্পা নামের এক নারী একটি প্রতিষ্ঠানের নামে এই বুকিং দেন। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, সেখানে দেশজুড়ে নাশকতার পরিকল্পনায় ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বৈঠক করছেন।
পরবর্তীতে গত ১৩ জুলাই ভাটারা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, দিনব্যাপী ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর একজন মেজর অংশ নিয়েছিলেন এবং তিনি তাদের ‘প্রশিক্ষণ দিয়েছেন’। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য।
তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা
মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস্ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই ঘটনার অন্য কোনো দিক আছে কি না, সেটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর প্রকৃত রহস্য কী এবং কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে।’
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং ঘটনার সঙ্গে আরও কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
অভিযুক্ত মেজরের বিচার প্রক্রিয়া
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক সেনা কর্মকর্তার বিচার সেনাবাহিনীর নিজস্ব আইন অনুযায়ী কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ জানান, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ আদালতে এই ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।
তার মতে, ‘ম্যানুয়াল অব বাংলাদেশ আর্মি ল (এমবিএএল)’ অনুযায়ী অভিযুক্তের র্যাঙ্ক ও অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে তদন্ত আদালত ও বিচারিক আদালত গঠন করা হয়। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে অপরাধের ধরনের ওপর ভিত্তি করে চাকরিচ্যুতি থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সেনা আদালতে রায় চূড়ান্ত হওয়ার পর সাধারণত বেসামরিক আদালতে আপিলের সুযোগ সীমিত থাকে।