ঢাকা ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামের যত ওঠানামা: বাংলাদেশে কি হতে যাচ্ছে?

এই দেশ এই সময় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০১:৩৯:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫ ৯ বার পঠিত

আট থেকে আশি, সোনা পছন্দ বহু মানুষের। কেউ গয়না হিসেবে কেনেন, কেউ আবার বিনিয়োগ হিসেবে। কিন্তু সোনার প্রতি কম-বেশি আগ্রহ আম বাঙালির থাকেই। বছরের শুরু থেকে একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে দিন দুয়েক আগেই এই ধাতুর দাম পৌঁছেছিল প্রায় আড়াই লক্ষে। রোববার (১৯ অক্টোবর) বাজুসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের বাজারে ভালো মানের ২২ ক্যারেট এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

 

এ নিয়ে দেশের বাজারে চলতি বছরে ৬৬ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হলো। এর মধ্যে ৪৮ বার দাম বেড়েছে এবং ১৮ বার কমেছে। ২০২৪ সালে মোট ৬২ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছিল— তখন ৩৫ বার বেড়েছিল, আর ২৭ বার কমেছিল। তবে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববাজারে সোনার দামে বড় ধরনের পতন ঘটে।

 

এদিন বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতায় সোনার দাম ২ শতাংশের বেশি কমে।

 

আন্তর্জাতিক রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে সোনার দাম ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ২৫৬ ডলার ১৯ সেন্টে নেমে আসে। যা সোমবার (২০ অক্টোবর) সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৮১ ডলার ২১ সেন্টে পৌঁছেছিল। ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য মার্কিন সোনা ফিউচারও ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ২৬৯ ডলার ৬০ সেন্টে লেনদেন হয়।

 

কিন্তু কেন স্বর্ণের দাম এভাবে রেকর্ডের পর রেকর্ড ভাঙছে? আবার কমছে! এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমার সম্ভাবনা, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার হিড়িক।

 

অর্থনৈতিক মন্দা, অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে স্বর্ণকে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সংকটকালে স্বর্ণের দাম কমে যাওয়ার বদলে উল্টো বাড়ে বা স্থিতিশীল থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে গাজা সংঘাত পর্যন্ত চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন।

 

আরেকটি কারণ হলো, ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা। একই সময়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে জাপানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং চলমান মার্কিন সরকারি অচলাবস্থা স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছে। গত মাসে স্বর্ণের দামে কিছুটা স্থিতিশীলতার আভাস মিলেছিল। কিন্তু মার্কিন সরকারের শাটডাউনের কারণে বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের দিকে আরও ঠেলে দিয়েছে।

 

গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী

২০১৪-২০১৫: এই সময়ে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমেছিল, কারণ বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ছিল এবং সুদের হার বাড়ছিল।

 

২০১৬-২০১৯: ব্রেক্সিট এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়লে সোনার দাম বৃদ্ধি পায়।

 

২০২০: COVID-19 মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়, যার ফলে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

 

২০২১: মহামারীর পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আশায় সুদের হার বাড়ানো হলে সোনার দাম কিছুটা কমে যায়।

 

তবে ২০২২-২০২৩: মুদ্রাস্ফীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা (যেমন ইউক্রেন যুদ্ধ) বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনার দাম আবার বাড়তে শুরু করে।

 

২০২৪-২০২৫: অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতির চাপ, এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনার দাম আবার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

যদিও এখানে যে পরিসংখ্যানগুলো দেওয়া হচ্ছে তা সাধারণ প্রবণতা বোঝানোর জন্য, নির্দিষ্ট তারিখের জন্য সুনির্দিষ্ট ডেটা নাও হতে পারে।

উল্লেখ্য, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন- আগামী সময়েও সোনার দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সোনার দামের এই ওঠানামা বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে ঘটে, যা বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে সোনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে তৈরি করে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামের যত ওঠানামা: বাংলাদেশে কি হতে যাচ্ছে?

আপডেট সময় : ০১:৩৯:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

আট থেকে আশি, সোনা পছন্দ বহু মানুষের। কেউ গয়না হিসেবে কেনেন, কেউ আবার বিনিয়োগ হিসেবে। কিন্তু সোনার প্রতি কম-বেশি আগ্রহ আম বাঙালির থাকেই। বছরের শুরু থেকে একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে দিন দুয়েক আগেই এই ধাতুর দাম পৌঁছেছিল প্রায় আড়াই লক্ষে। রোববার (১৯ অক্টোবর) বাজুসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের বাজারে ভালো মানের ২২ ক্যারেট এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

 

এ নিয়ে দেশের বাজারে চলতি বছরে ৬৬ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হলো। এর মধ্যে ৪৮ বার দাম বেড়েছে এবং ১৮ বার কমেছে। ২০২৪ সালে মোট ৬২ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছিল— তখন ৩৫ বার বেড়েছিল, আর ২৭ বার কমেছিল। তবে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববাজারে সোনার দামে বড় ধরনের পতন ঘটে।

 

এদিন বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতায় সোনার দাম ২ শতাংশের বেশি কমে।

 

আন্তর্জাতিক রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে সোনার দাম ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ২৫৬ ডলার ১৯ সেন্টে নেমে আসে। যা সোমবার (২০ অক্টোবর) সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৮১ ডলার ২১ সেন্টে পৌঁছেছিল। ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য মার্কিন সোনা ফিউচারও ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ২৬৯ ডলার ৬০ সেন্টে লেনদেন হয়।

 

কিন্তু কেন স্বর্ণের দাম এভাবে রেকর্ডের পর রেকর্ড ভাঙছে? আবার কমছে! এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমার সম্ভাবনা, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার হিড়িক।

 

অর্থনৈতিক মন্দা, অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে স্বর্ণকে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সংকটকালে স্বর্ণের দাম কমে যাওয়ার বদলে উল্টো বাড়ে বা স্থিতিশীল থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে গাজা সংঘাত পর্যন্ত চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন।

 

আরেকটি কারণ হলো, ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা। একই সময়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে জাপানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং চলমান মার্কিন সরকারি অচলাবস্থা স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছে। গত মাসে স্বর্ণের দামে কিছুটা স্থিতিশীলতার আভাস মিলেছিল। কিন্তু মার্কিন সরকারের শাটডাউনের কারণে বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের দিকে আরও ঠেলে দিয়েছে।

 

গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী

২০১৪-২০১৫: এই সময়ে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমেছিল, কারণ বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ছিল এবং সুদের হার বাড়ছিল।

 

২০১৬-২০১৯: ব্রেক্সিট এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়লে সোনার দাম বৃদ্ধি পায়।

 

২০২০: COVID-19 মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়, যার ফলে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

 

২০২১: মহামারীর পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আশায় সুদের হার বাড়ানো হলে সোনার দাম কিছুটা কমে যায়।

 

তবে ২০২২-২০২৩: মুদ্রাস্ফীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা (যেমন ইউক্রেন যুদ্ধ) বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনার দাম আবার বাড়তে শুরু করে।

 

২০২৪-২০২৫: অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতির চাপ, এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনার দাম আবার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

যদিও এখানে যে পরিসংখ্যানগুলো দেওয়া হচ্ছে তা সাধারণ প্রবণতা বোঝানোর জন্য, নির্দিষ্ট তারিখের জন্য সুনির্দিষ্ট ডেটা নাও হতে পারে।

উল্লেখ্য, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন- আগামী সময়েও সোনার দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সোনার দামের এই ওঠানামা বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে ঘটে, যা বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে সোনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে তৈরি করে।